তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ প্রাথমিক ধারণা
প্রথম অধ্যায়ঃ
ইউনিট ১
সূচনা
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তিরযুগ।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানুষের
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করছে। দিনদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। পৃথিবীর উপরিভাগ কিংবা অভ্যন্তর, গভীর সমুদ্র থেকে সুদূর মহাকাশ সর্বত্রই আজ প্রযুক্তির ব্যবহার। শিক্ষা, চিকিৎসা গবেষণা, যোগাযোগ সকল ক্ষেত্রেই আজ যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করছে। দিনদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। পৃথিবীর উপরিভাগ কিংবা অভ্যন্তর, গভীর সমুদ্র থেকে সুদূর মহাকাশ সর্বত্রই আজ প্রযুক্তির ব্যবহার। শিক্ষা, চিকিৎসা গবেষণা, যোগাযোগ সকল ক্ষেত্রেই আজ যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১.১ তথ্য ও উপাত্তের ধারণা
উপাত্তঃ
ডাটা বা উপাত্তকে আমরা কাচাঁমালের
সাথে তুলনা করতে পারি। কাচাঁমালকে যেমন ব্যবহার উপযোগী করতে হলে প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন
তেমনি উপাত্তকেও অর্থবহ করতে হলে প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। সঠিক ফলাফল পাওয়ার
জন্য প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত কাচাঁমালসমুহকে ডাটা বা উপাত্ত বলে। উপাত্ত শব্দ, ছবি, সংখ্যা,
প্রতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা করি সবই উপাত্ত। যেমন
আমরা যখন কোন দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করি তখন একটি রিসিট দেওয়া হয়। এখানে অনেকগুলো উপাত্ত
রয়েছে যেমন: পণ্য ক্রয়ের তারিখ, সময়, দাম এবং পণ্যের বিবরণ ইত্যাদি। এখানে সকল উপাত্তকে
নিয়েই রিসিট নামের একটি ফলাফল পাওয়া যায়।
তথ্যঃ
কোন বিশেষ ডাটা প্রেক্ষিতে
ডাটাকে অর্থবহ করাই হল তথ্য বা ইনফরমেশন। হল কিছু বিশৃঙ্খল ফ্যাক্ট যা অর্থবহ নয়। আর
তথ্য হল এই বিশৃঙ্খল ডাটার সুশৃঙ্খল সমাহার যা সঠিক ফলাফল বা অর্থবহ সহজবোধ্য ও ব্যবহার
উপযোগী হয়।
উপাত্ত + প্রেক্ষিত + তথ্য
ধরা যাক ০৬১২১৪ একটি উপাত্ত।
এটি তথ্য হবে যখন এটি কোন বিশেষ প্রেক্ষিতে সঠিক অর্থ প্রকাশ করে। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে
এটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করবে।যেমনঃ
ক) যদি এই উপাত্তটি দিয়ে
dd.mm.yy ফরম্যাটে ইংরেজি তারিখ প্রকাশের প্রেক্ষিতে চিন্তা করা হয় তবে এর অর্থ হবে
২০১২ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ।
খ) আবার যদি এটি দিয়ে
hour:min:sec এই ফরম্যাটে সময় প্রকাশ করা হয় তবে এর অর্থ হবে ৬ টা ১২ মিনিট ১৮ সেকেন্ড।
কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুসারে
কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে কম্পিউটারে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ফলাফলই হল তথ্য।
১.২ উপাত্ত ও তথ্যের মধ্যে পার্থক্য
উপাত্ত
|
তথ্য
|
সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত কাচাঁমাল
সমূহকে ডাটা বা উপাত্ত বলে।
|
তথ্য হল কোন প্রেক্ষিতে ডাটাকে অর্থবহ করাই হল তথ্য বা
ইনফরমেশন।
|
তথ্যের ক্ষুদ্রতম এককই উপাত্ত যা বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ
করা হয়।
|
উপাত্তকে প্রসেস করে তথ্যে রুপান্তর করা হয়।
|
উপাত্ত পুরোপুরি কোন সঠিক অর্থ প্রকাশ করেনা।
|
তথ্য কোন বিষয়ের অর্থ প্রকাশ করে যা ব্যবহাকারী সহজেই বুঝতে
পারে।
|
উপাত্ত তথ্যের উপর নির্ভর করেনা ।
|
তথ্য উপাত্তের উপর নির্ভরশীল।
|
উপাত্ত তথ্য তৈরির প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
|
তথ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
|
১.৩ তথ্য ওযোগাযোগ প্রযুক্তি
তথ্য প্রযুক্তি
সাধারণভাবে তথ্য প্রযুক্তি
বলতে তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রয়োগ করার প্রযুক্তিকে বুঝায়। একে ইনফরমেশন
টেকনোলজি বা আইটি বলা হয়। টেলিযোগাযোগ , স্যাটেলাইট যোগাযোগ, অডিও ভিডিও সমপ্রচার ডাটাবেজ
ব্যবস্থাপনা, সফটওয়্যার উন্নয়ন, নেটওয়ার্ক, মুদ্রণ প্রযুক্তি, বিনোদন প্রযুক্তি, তথ্য
ভান্ডার সবগুলোকে তথ্য প্রযুক্তি বলা যেতে পারে। এক কথায় কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ
ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, প্রত্রিয়াকরণ, এবং প্রয়োগ ব্যবস্থাকে তথ্য প্রযুক্তি
বলা হয়।
যোগাযোগ প্রযুক্তি
কম্পিউটার বা অন্য কোন যন্ত্রের
সাহায্যে ডাটাকে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বা এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরের
প্রক্রিয়া হচ্ছে ডাটা কমিউনিকেশন। ডাটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে
যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি বলে।
তথ্য ওযোগাযোগ প্রযুক্তি
তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ
প্রযুক্তির রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে একত্রে
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা হয়। কম্পিউটার বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের সাহায্যে
তথ্যকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্ভরযোগ্যভাবে আদান প্রদান করাকে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি বলে।
১.৪ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান
১। অপচয় রোধ করে।
২। সময় সাশ্রয় করে।
৩। তথ্যের প্রাপ্যতা সহজ করে।
৪। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব।
৫। প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডের
গতিকে ত্বরান্বিত করে।
৬। সর্ব ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি
করে।
৭। ব্যবসা বাণিজ্যে লাভজনক
প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।
৮। ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী
পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা যায়।
৯। ঘরে বসেই পছন্দমত প্রয়োজনিয়
পণ্যের অর্ডার দেয়া যায়।
১০। সিটিজেন চার্টারের মত নাগরিক
সুবিধাগুলো ঘরে বসেই পাওয়া যায়।
১.৫ কম্পিউটার
ল্যাটিন শব্দ Computare থেকে
ইংরেজি Computer শব্দটির উৎপত্তি। এর আভিধানিক অর্থ গননা যন্ত্র বা হিসাবকারী যন্ত্র।
পূর্বে কম্পিউটার দিয়ে শুধু হিসাব-নিকাশই করা হত। কিন্তু বর্তমানে অত্যন্ত দ্রুত হিসাব-নিকাশ
সহ আরো বহু ধরণের কাজ করা হয়। কম্পিউটার সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি হিসাব-নিকাশ করতে
পারে। কম্পিউটারের কাজ করার গতি হিসেব করা হয় ন্যানোসেকেন্ডে। ন্যানোসেকেন্ড হচ্ছে
এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের একভাগ সময় মাত্র। ইলেক্ট্রন প্রবাহের মাধ্যমে কম্পিউটারের
সকল কাজকর্ম পরিচালিত হয়।
১.৬ ইন্টারনেট
ইন্টারনেট শব্দটির পূর্ণরূপ
হল ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক। অন্য কথায় নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্কই হল ইন্টারনেট। বর্তমান
বিশ্বে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়ায় একমাত্র আধিপত্য বিস্তারকারী মাধ্যমটির নাম
ইন্টরনেট।
ইন্টারনেটের সুবিধাঃ
১। ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে প্রয়োজনীয়
তথ্যের নাম লিখে সার্চ করলেই তথ্যগুলো প্রদর্শিত হয়।
২। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই
বিশ্বের যে কোন প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
৩। ফ্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়।
৪। VOIP এর মাধ্যমে প্রচলিত
ফোনের চেয়ে খুব কম খরচে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে কথা বলা যায়।
৫। ঘরে বসেই বিশ্বের সকল দেশের
পত্রিকা পড়া যায়।
৬। ই-কমার্সের সাহায্যে ঘরে
বসেই পণ্য কেনা যায়।
৭। বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ার ও
বিনোদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
৮। ইয়াহু মেসেঞ্জার, গুগল টক,
স্কাইপি ইত্যাদি মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে থাকা যে
কোন ব্যক্তির সাথে টেক্সট ও ভিডিও শেয়ার করা যায়।
৯। অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নেওয়া যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন