গ্লোবাল ভিলেজ (Global Village)

গ্লোবাল ভিলেজ (Global Village).

What is global village?

একই গ্রামের মানুষজন চাইলে যখন খুশি পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ-যোগাযোগ করতে পারে। চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি—অনেক কিছুরই বিনিময় হয় গ্রামের মানুষের মধ্যে।

ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে ভার্চুয়াল যোগাযোগ সহজ হয়েছে। গ্রামের মতো অনলাইনেও বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি ইত্যাদির বিনিময় হচ্ছে। অর্থাৎ পুরো বিশ্বটাই একটা ভার্চুয়াল গ্রামের মতো। এটাই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বা বিশ্বগ্রাম।


গ্লোবাল ভিলেজের ধারণাটা প্রথম আসে কানাডিয়ান অধ্যাপক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহ্যানের (১৯১১-১৯৮০) মাথায়। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গুটেনবার্গ গ্যালাক্সি : দ্য মেকিং অব টাইপোগ্রাফিক ম্যান’ বইয়ে তিনি গ্লোবাল ভিলেজ নিয়ে লিখেন। এরপর ১৯৬৪ সালে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মিডিয়া’ বইয়েও এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাঁর সময়কালে প্রযুক্তি খুব বেশি দূর এগোয়নি, কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন—প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বটা একটা গ্রামের মতোই কাছাকাছি চলে আসবে।




বিশ্বগ্রামের সুবিধা :

১. পুরো পৃথিবী মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। দূরত্বের ব্যবধান এখন আর কোনো বিষয় নয়।
২. তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ বর্তমানে গোটা বিশ্বের সাথে অতি সহজে যোগাযোগ করতে পারছে।
৩. ইন্টানেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের খবর অতি অল্প সময়ে নেয়া যাচ্ছে।
৪. আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে একদেশের লোক অন্য দেশের কোনো বায়ারের কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারছে।
৫. ই-লানির্ং এর মাধ্যমে ঘরে বসেই বিশ্বের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসেবা গ্রহণ করতে পারছে।
৬. অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছে।
৭. টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে নিজ দেশে থেকেই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের দক্ষ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপথ্য নিতে পারছে।
৮. সাংস্কৃতিক তথ্যাদি বিনিময় করতে পারছে।
৯. বিশ্বভাতৃত্ববোধ জাগ্রত হচ্ছে।


বিশ্বগ্রামের অসুবিধা:

১. ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকিং এ মাধ্যমে গোপনীয় তথ্য চুরি হচ্ছে।
২. সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হচ্ছে।
৩. ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির মাধ্যমে ই-কমার্স পদ্ধতিটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
৪. টরেন্ট বা ফাইল শেয়ার সাইটগুলোর মাধ্যমে কপিরাইটের বস্তুসমূহের বিতরণ ও ব্যবহার উৎসাহিত হচ্ছে।
৫. পর্ণোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
৬. মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লংঘিত হচ্ছে।


বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদানসমূহঃ-
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামের ধারণা সহজেই বাস্তবায়ন ও এর প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। নিচে বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদানসমূহের বর্ণনা দেয়া হলো। যথাঃ

১. হার্ডওয়্যার (Hardware) : বিশ্বগ্রামে যে কোন ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদানÑপ্রদানের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সমাগ্রীর। হার্ডওয়্যারের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার এবং এর সাথে সংযুক্ত পেরিফেরাল যন্ত্রপাতি, ল্যান্ড বা মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, অডিও-ভিডিও রেকর্ডার, স্যাটেলাইট, রেডিও, টেলিভিশন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুুক্তি নির্ভর বিভিন্ন ডিভাইস।

২. সফটওয়্যার (Software): বিশ্বাগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার প্রয়োজন। সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়্যার, কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং ভাষা ইত্যাদি।

৩. নেটওয়ার্ক সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি (Connectivity): বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড হলো নিরাপদভাবে রিসোর্স শেয়ার করার নেটওয়্যার্ক বা কানেকটিভিটি যার মাধ্যমে উপাত্ত ও তথ্য প্রতিটি নিকট পৌঁছাতে পারে। নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদানই হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূল ভিত্তি। নিরাপদ তথ্য প্রদানের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ নেটওয়ার্ক বা কানেকটিভিটি।

৪. ডেটা (Data): ডেটা হলো সাজানো নয় এমন কিছু বিশৃঙ্খলা ফ্যাক্ট (Raw Fact)। ডেটাকে প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমেই ব্যবহারযোগ্য ইনফরমেশন বা তথ্যে পরিণত করা হয়। বিশ্বগ্রামে বসবাস করতে প্রয়োজন বিভিন্ন তথ্য যা ডেটা থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে পাওয়া যায়। বিশ্বাগ্রাম ডেটা ও তথ্যকে মানুষের প্রয়োজনে একে অপরের সাথে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে সেয়ার করতে হয়।

৫. মানুষের সক্ষমতা (Capacity): বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলো মধ্যে মানুষের সক্ষমতা অন্যতম। যেহেতু বিশ্বগ্রাম মূলত তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তাই তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে মানুষের সচেতনতা, স্বাক্ষরতা ও সক্ষমতা ইত্যাদির উপর এর প্রয়োগ নির্ভর করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো ব্যবহার করার জ্ঞান না থাকলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া যে কোন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ বা বিতরণের জন্য এই প্রযুক্তিতে মানুষের সক্ষমতা প্রয়োজন।




যোগাযোগ

Oxford Dictionary এর মতে যোগাযোগ হল “Imparting or exchanging of information by speaking writing or using some other medium is called Communication” তার মানে আমরা যদি কোন তথ্য একে অপরের সাথে শেয়ার করতে চাই তাহলে আমরা যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা করে থাকি সেটাই হল যোগাযোগ। এখন আমরা যোগাযোগ ইশারা এর মাধ্যমে করতে পারি, লিখে করতে পারি কিংবা সামনাসামনি মৌখিক ও করতে পারি। এই তিনটি উপায়কেই তিনটি আলাদা উপায়ে ভাগ করা হয়েছে যেগুলো হচ্ছে-

(1) Verbal

(2) Non Verbal

(3) Written

ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল

চিঠিপত্রের আধুনিক এবং ডিজিটাল রূপ হচ্ছে ই-মেইল।  ঠিকানার পরিবর্তে এখানে একটি থাকে একটি ই-মেইল এড্রেস । কেউ যদি ই-মেইল পাঠাতে চায় তাহলে তার নিজের একটি ই-মেইল এড্রেস থাকা লাগে এবং যার কাছে পাঠাতে চাচ্ছে তার ই-মেইল এড্রেসটি জানা লাগবে। যেমন ধর তুমি যদি আয়মান ভাইয়াকে একটি মেইল পাঠাতে চাও তাহলে তোমার ayman@10minuteschool.com  এই এড্রেস এ একটি মেইল পাঠাতে হবে। এখানে ayman হল ভাইয়ার নাম আর 10minuteschool.com হল ডোমেইন নেম।

কর্মসংস্থান

বিশ্বগ্রামের একটি অভাবনীয় সাফল্য হল কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এখন সহজেই বাংলাদেশের এক ছেলে আমেরিকান কারো কম্পানিতে পার্টটাইম কাজ করতে পারে।
Outsourcing এর মাধ্যমে এটি সহজেই করা সম্ভব। আউটসোর্স অনেকটা এভাবে কাজ করে।
ধর তুমি খুব ভাল ছবি আঁকতে পার, এখন তুমি তোমার এই গুণাবলি একটা ওয়েবসাইটে লিখলে, আমেরিকার একটা ছেলের একটা ছবি দরকার। এখন সে তোমার এই গুনাবলি দেখে তোমার কাছে বলবে কোন একটি নির্দিষ্ট ছবি তুমি আঁকতে পারবে নাকি, তার বিনিময়ে সে তোমাকে টাকা দিবে।
এভাবেই বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠছে এক সীমাহীন চাকুরির বাজার।

শিক্ষা ও গবেষণা

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এবং বিশ্বগ্রাম কিভাবে প্রভাব ফেলছে তার সব থেকে সহজ আর বোধগম্য উদাহরণ বোধহয় 10 Minute School. একটি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে আমরা দেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন খুব সহজেই আমরা আমাদের দরকারি পড়া পড়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে।

গবেষণা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে এই বিশ্বগ্রামের জন্য। কোন একটি বিষয়ে গবেষণা কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে তা আমরা একটি ক্লিকের মাধ্যমেই জানতে পারছি। কিংবা আমরা যদি কোন গবেষক এর সাথে কাজ করতে চাই তাহলেও তার সাথে যোগাযোগ করা খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে ইন্টারনেট এর অগ্রগতির জন্য। কিংবা আমাদের গবেষণার জন্য দরকারি কিছু ডাটাও আমরা পেতে পারি সহজেই।

অফিস এবং হোম অটোমেশন

আচ্ছা একটু ভেবে দেখ তো, তুমি ভর দুপুরে কোথাও কাজে বেরিয়েছ বাসায় ফেরার সময় তোমার মোবাইল বের করে একটা অ্যাপ এর মাধ্যমে এসি চালিয়ে দিলে যাতে তুমি এসেই শীতলতা অনুভব করতে পার, তাহলে বল তো কেমন হত ? এটা আসলেই সম্ভব বাস্তবে বিশ্বগ্রাম আর ইন্টারনেট এর কল্যাণে। এটিকেই মূলত হোম অটোমেশন বলে। শুধু এটিই নয় দরজার লক, ফ্যান লাইট সব ই কন্ট্রোল করা যায় বর্তমানে শুধু দরকার সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এ ছাড়াও যদি ধর গ্যাসের লাইন লিক করেছে, কিংবা বাসায় চোর ঢুকেছে তাহলেও তোমার ফোনে নোটিফিকেশন চলে যাবে। অফিসের ক্ষেত্রেও কর্মচারীদের উপস্থিতি থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করা যায় দূর থেকেই।

ব্যবসা বাণিজ্য

এক সময় ব্যবসা বাণিজ্য বলতে শুধুমাত্র কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে কেনা বেচাকেই বুঝানো হত। কিন্তু এখন আর ব্যবসার কোন গন্ডি নেই। রাঙ্গামাটির কেউ চাইলেই রাজশাহী সিল্ক এর শাড়ি কিনতে পারছে। কিংবা ঢাকায় বসেই বগুড়ার দই এর অর্ডার করে দেওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে বিশ্বগ্রামের জন্য, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য।





Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন