কেন রে কি হয়েছে?ছ্যাকা খেয়েছিস নাকি?

 বেশ কয়েকদিন আগে আমার এক কাছের বান্ধবী প্রেম পড়েছে।একদম আকাশ থেকে পড়লো,হাড়গুড় ভেঙ্গে গেছে।দিন নাই রাত নাই ওনাদের কথোপকথন চলে।চ্যাটিং চলে।জমিয়ে প্রেমটা করছে।
আমার তাতে অসুবিধা নেই।শুধু এক জায়গায় দ্বিমত পোষণ করি,তা হলো কাছের বান্ধবীরা প্রেমে পড়লে আমাদের মত অধম বান্ধবীদের ভুলে যায়।এটা মানাটা কষ্টের, তবে প্রেম করছে করুক ছ্যাকা না খাইলেই হয়।ছ্যাকা খেলে আবার আমাদের শরণাপন্ন হবে।কেঁদে কেটে একাকার হবে।
যাই হোক, সেদিন ক্লাস শেষ করে বের হলাম।হঠাৎ বান্ধবীর ফোন।

আর কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
" নাফিসা একটু দেখা করতে পারবি কিনা?"
আমি বললাম,
" কেন রে কি হয়েছে?ছ্যাকা খেয়েছিস নাকি?"
ও বেশি কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলো।কেন যেন সবসময় আমার মাথায় ছ্যাকাটাই ঘুরে।তবে নিশ্চিত সে গোল খেয়েছে।আগপিছ না ভেবে সোজা তাঁর বাসায় উপস্থিত হলাম।গিয়ে ওর হাল দেখে আমার নিজেরই খারাপ লাগছে।
জিজ্ঞেস করলাম,
" কি হলো রে?তখন তো বললি না,ছ্যাকা খেলি নাকি?"
" হ্যাঁ রে, এতকিছু হলো, এখন ও আমাকে বিয়ে করবে না বলছে।"
" ভালো তো,করিস না বিয়ে।আমার তো সিঙ্গেল থাক।"
" মজা করিস না বান্ধবী।এখন কি করবো বল।"
" তোরা বাচ্চার নাম রাখা পর্যন্ত ঠিক করে ফেললি।এখন বিয়ে করবে না মানে কি?নাকি নাম রাখা নিয়ে ব্রেকাপ হয়েছে?"
" তা নয়, ওর পরিবার প্রেম পছন্দ করে না।তাদের পছন্দে ওকে বিয়ে করাবে।আর ও তা মেনে নিলো।একবারও আমার কথা ভাবেনি।"
বান্ধবীর সাথে সময় কাটিয়ে, ওকে বুঝিয়ে বাসায় ফিরলাম।তবে বান্ধবীর কান্নাটা সহ্য হচ্ছে না।মনে মনে একটা প্ল্যান করে ফেললাম।আর কিছু বন্ধু বান্ধবকে সাথে নিলাম কাজটা সম্পূর্ণ করতে।একটা মাইক্রো ভাড়া করলাম।তারপর সুযোগ মত বাধ্য ছেলেটাকে কিডন্যাপ করলাম।
- আপনারা কারা?আমাকে এভাবে জোর করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
- দুলাভাই আমরা আপনার শ্যালক শ্যালিকা।
- মানে কি?
- জ্বি।কিছুক্ষণ পর আপনি একটা বিরাট একটা ভালো কাজ করতে চলেছেন।তাই আপনাকে আমরা কিডন্যাপ করলাম। দুলাভাই কিছু মনে করবেন না।একটু কষ্ট তো করতেই হবে, সুখের জন্য।
- বারবার দুলাভাই দুলাভাই করবেন না।
- তাহলে কি বলবো?খালু?বান্ধবীর জামাইকে তো দুলাভাই বলে।
- কি?বুঝেছি এবার, সব সুপ্রিয়ার কাজ।আপনাদের ও ধরিয়েছে আমাকে যেন উঠিয়ে নেয়।কোন লাভ নেই, বিয়েটা আমি করছি না।
- আপনি তো করবেন,আপনার ঘাড়ও করবে।প্রেম করার সময় মনে ছিলো না।এখন বাধ্য ছেলে সাজা হচ্ছে।
- একবার ছাড়া পাই,সবাইরে জেলের ভাত খাওয়াবো।
- পারবেন না দুলাভাই।ততক্ষণে আমরা আপনার পরম আত্নীয় হয়ে যাবো।জেল খাটলে তো আপনারই লজ্জা তাই না দুলাভাই।
- দুলাভাই শব্দটা বিদখুটে শুনাচ্ছে।
- চুপ, বেশি কথা বললে বিয়ে একটা না দু'টা করিয়ে দিবো।যতবেশি কথা বলবেন ততবেশি বিয়ে।এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন।বিয়ে কয়টা করবেন?
তারপর দেখলাম ব্যাটা পুরাপুরি চুপ বনে গেছে।
ঔদিকে আমার বান্ধবীকে আমার অন্য এক বান্ধবী জায়গা মত নিয়ে আসছে।আমরাও প্রায় পৌঁছে গেছি।ওখানে কাজীও ডাকা হয়েছে।
তারপর সুপ্রিয়া তাঁকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।দুলাভাই ভীষণ ক্ষেপে আছে সুপ্রিয়ার উপরে।ওনার ধারণা সব সুপ্রিয়ার প্ল্যান। আসলে মেইন নায়িকা তো আমি।
কিছুতেই দুলাভাই বিয়ে করবে না।আমরা খুব জোর করছি।এক পর্যায়ে আমার বান্ধবী খুব রেগে গেলো।
আর বললো,
" আমি বিয়েটা করবো না।আর যাই হোক জোর করে ভালোবাসা হয় না,বিয়েও হয় না।ও বিয়ে করতে চাইলেও আমি করবো না।তোরা ওকে ছেড়ে দে।আর কাজটা তোরা ঠিক করিসনি।"
আমি নিজেই আহাম্মক বনে গেলাম।যার জন্য চুরি করলাম সেই বলে চোর।তারপর দুলাভাইকে আমরা ছেড়ে দিলাম।ওনি চলে গেছে।আমি বুঝতে পারছি জোর করে বিয়ে হয় না।আমার বান্ধবী ঠিক কথাই বলেছে।কিন্তু আমি চরম রাগে।
আমি ওকে বললাম,
" ইচ্ছে করছে তোকে কসে একটা চড় দেই।তবে দিবো না, তুই মন ভাঙা অবস্থায় আছিস।চড়টা তুলে রাখলাম।"
" আচ্ছা পরে দিস।"
" আমাদের কিন্তু টাকা খরচ হয়েছে।মাইক্রো ভাড়া করেছি।"
" আচ্ছা শুন সব আমি পুষিয়ে দিবো। আজকে তোদের সবাইকে আমি ভালো করে খাওয়াবো।আমার পক্ষ থেকে ট্রিট।আমার স্বাধীন জীবনের জন্য।কাজী সাহেব আপনিও চলেন। "
এরপর সবাই মিলে খেয়েদেয়ে বাসায় ফিরলো।আর আমি সুপ্রিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফিরলাম।মনে মনে ভাবছি, কিডন্যাপ টা জলে গেলো।অবশ্যই প্ল্যানিং টা খারাপ ছিলো না।কাজ হলেও হতে পারত।
যাই হোক সুপ্রিয়া এমন ছেলেকে বিয়ে করে নাই তাতেও আমি মহাখুশি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন